সমগ্র গোয়াতে আপনি পেয়ে যাবেন অসংখ্য ছোট বড়ো সমুদ্র সৈকত, আর তার সাথে মনোরঞ্জনের সমস্ত উপাদান; তবে যদি আপনি ভিড় এড়িয়ে নিরিবিলি কোনো সৈকতে সময় কাটাতে চান, তাহলে কেরি বিচ (Keri Beach in Goa) নিঃসন্দেহে একটি দুর্দান্ত গন্তব্য।
গোয়ার একেবারে উত্তরপ্রান্তে বিরাজ করছে জোড়া সৈকত – কেরি আর কুয়েরিম (Keri and Querim Beach) – তবে বেশিরভাগ পর্যটকের কাছে এনারা বেশ অপরিচিত। আপনি যদি সেই সমস্ত শান্তিপ্রিয় প্রকৃতি প্রেমীদের মধ্যে পড়েন তাহলে কেরি বিচ আপনার জন্য একটি আদর্শ জায়গা।
সামনের গোয়া ট্যুর ফাইনাল করার আগে জেনে নিন কেরি বিচ (Keri Beach) আর তার যমজ বোন কুয়েরিম সম্পর্কে।
নির্জন বালুতটে আবিষ্কার করুন কেরি বিচকে (Keri Beach)
কেরি ও কুয়েরিম সৈকত গোয়ার একেবারে উত্তরে, গোয়া-মহারাষ্ট্র সীমান্তের কাছে অবস্থিত। এই দীর্ঘ সৈকতের উত্তরের অংশটিকে বলা হয় কুয়েরিম (Querim Beach) এবং দক্ষিণ অংশটি পরিচিত কেরি বিচ (Keri Beach) নামে।

এই জোড়া সৈকত এতটাই দীর্ঘ যে কেরির দক্ষিণ প্রান্তে দাঁড়িয়ে আপনি কুয়েরিমের শেষ প্রান্ত খালি চোখে দেখতে পাবেন না – তবে ক্যামেরায় জুম করে অবশ্য সেখানে পৌঁছে যেতে পারেন। যে গুটিকতক পর্যটক এখানে ঘুরতে আসেন তার বেশিরভাগই কেরিতেই থাকেন, কারণ কেরি বিচের প্রবেশপথ গোয়া থেকে কাছে, অন্যদিকে কুয়েরিম হলো মহারাষ্ট্রের কাছাকাছি।
গোয়াতে ঘুরতে আসা শতকরা ৯৫ জন পর্যটকই এই জায়গার নামও শোনেননি, আর ঠিক এই কারণেই এটি এখনো এত নির্জনতা আর নির্মলতা বজায় রাখতে পেরেছে। আমি যখন গিয়েছিলাম, গোটা বিচে কেবল – এক অস্ট্রিয়ান দম্পতি ও তাদের তিন সন্তান, আর অনেকটা দূরে নির্জনতা উপভোগ করছিলো আরোও দুই বিদেশী দম্পতি।
বাকিটা শুধু প্রকৃতির নিরবতা আর সাগরের গর্জন।
কীভাবে যাবেন কেরি বিচে?
যদি আপনি উত্তর গোয়ায় থাকেন, যেমন আরামবোল (Arambol), মোরজিম (Morjim) বা মন্দ্রেম (Mandrem), তাহলে কেরি বিচ পৌঁছানো বেশ সহজ। আরামবোল থেকে মাত্র ২০–২৫ মিনিট বাইক চালিয়ে পাহাড়ি, সবুজে ঘেরা রাস্তা পেরিয়ে কেরি বিচে পৌঁছে যেতে পারেন আপনি। Google Maps প্রায় ঠিক পথ দেখালেও, শেষের দিকটা স্থানীয় মানুষজনকে জিজ্ঞেস করে নেওয়া ভালো।
বিচের কাছাকাছি এসে আপনি দেখতে পাবেন ঝাউ আর ইউক্যালিপটাস গাছের সারি, আর তা পেরিয়েই সোনালী বালির কেরি বিচ। রাস্তার পাশে দেখা মিলবে ছোট একটি চার্চেরও।
- নিকটতম বিমানবন্দর: ডাবোলিম (Dabolim) – প্রায় ৫৮ কিমি
- নিকটতম রেলস্টেশন: পারনেম (Pernem) – ১৫.৫ কিমি, থিভিম – ৫৪ কিমি, মাডগাঁও – ৬৭ কিমি
এই জায়গাগুলো থেকে সহজেই ট্যাক্সি বা হোটেল পিকআপ বুক করা যায়।
কেরি বিচের বিশেষত্ব কী?
যেখানে উত্তর গোয়ার বেশিরভাগ সৈকত অর্থাৎ ক্যালাংগুট, আরামবোল বা বাগার মতো বিচগুলো ভিড়ে ভর্তি, আর দুপুর পেরোতে না পেরোতেই ডিজে মিউজিকের তালে দুলতে শুরু করে, সেখানে কেরি বিচ আপনাকে স্বাগত জানাবে নির্জনতা আর প্রকৃতির নিঃশব্দ আলিঙ্গন দিয়ে। নেই কোনো হোটেল, তাই নেই কোনো ডিজের উপদ্রব। ঝাউ আর ইউক্যালিপটাসের সারি পেরোলেই ঝকঝকে সোনালী বালুতট।

মোটের উপর, কেরি বিচ মানে একান্তে সময় কাটানো, প্রকৃতির সঙ্গে সময় ভাগ করে নেওয়া, আর নিজের ভেতরের শান্তিকে খুঁজে বের করা। এখানে নেই কোনো হোটেল, নেই কোনো ডিজের উপদ্রব, নাই কনসার্ট, নাই ভিড়। শুধুই আপনাকে ঘিরে নীল আরব সাগর, ঝকঝকে সোনালী বালুতট, ঝাউ-ইউক্যালিপটাসের সারি আর মুক্ত আকাশ। ভ্রমণকারীরা, যারা একঘেয়ে জীবনের বাইরে একটু মানসিক বিশ্রাম খুঁজছেন, তাদের জন্য আদর্শ জায়গা।
গাছের ছায়ায় তলা দিয়ে কেরি থেকে কুইরিম পৌঁছানোর একটি সরু পথ রয়েছে। উত্তর ভাগে কুইরিম বিচের দিকে কিছুটা অংশে কংক্রিট আর বড় পাথরের তৈরি বাঁধ দেখা যায়। কুইরেম পাশের কাদা-মাটি এলাকা থেকে সৈকতকে আলাদা রাখে এই বাঁধ।
কেরি বিচের প্রবেশপথের পাশে আপনি পাবেন একটিমাত্র বিচ শ্যাক। মালিক বেশ আন্তরিক, আর খুবই সাধারণ মূল্যে স্থানীয় মাছের রান্না পরিবেশন করেন। এখানে আপনি পমফ্রেট, কিংফিশ, টুনা ফ্রাই পাবেন — তবে কিংফিশ-ডিম ফ্রাই অবশ্যই করবেন ট্রাই। এমন স্বাদ কোথাও পাবেন না!
কেরি বিচে সমুদ্রস্নান করা কি নিরাপদ?
কেরি বিচে সমুদ্রস্নান করা যায়, তবে বেশ সাবধানে। বিশেষ করে কুইরেমর দিকে কিছুটা অংশে ঢেউগুলো পাথরে আছড়ে পরে, ওই জায়গাগুলোতে না নামে ভালো। কেরির সৈকতের ঢাল বেশ তীব্র, ফলে কখনো কখনো একসঙ্গে দুটি ঢেউ আঘাত করে। সাঁতার না জানলে বা শিশুদের নিয়ে এলে, অতিরিক্ত সতর্ক থাকা জরুরি।
এখানে কোনও লাইফগার্ড নেই, পর্যাপ্ত পর্যটকও না থাকায় বিপদে পড়লে সাহায্য পাবেন না। সুতরাং নিরাপদে সৈকতের কাছে থেকেই স্নান সারুন, বেশি গভীরে যাবেন না।
কোথায় থাকবেন?
কেরি বিচে থাকার তেমন সুযোগ নেই, তবে কাছাকাছি এলাকাগুলির মধ্যে আরামবোল, আশভেম, মোরজিম ও মন্দ্রেমে প্রচুর হোটেল, গেস্টহাউস ও রিসোর্ট রয়েছে। আরামবোল কেরি বিচ থেকে সবচেয়ে কাছের জায়গা। এখান থেকে কেরি সহ অন্যান্য বিচ অনায়াসে ঘুরে দেখা যায়।
কেরি বিচ (Kari Beach) ভ্রমণের কিছু গুরুত্বপূর্ণ টিপস
- পানীয় জল ও কিছু শুকনো খাবার সঙ্গে রাখুন, কারণ এখানে দোকান খুব কম
- আরামদায়ক জুতো পরুন, রাস্তা কিছুটা এবড়োখেবড়ো
- বাইক চালালে অবশ্যই হেলমেট পরুন — নিরাপত্তার জন্য এবং জরিমানা এড়াতে
- সকাল ও বিকেল সময়টাই এখানে সবচেয়ে মনোরম
- সন্ধ্যার আগেই হোটেলে ফিরে যাওয়া ভালো, কারণ রাতের দিকে জায়গাটা শুনশান হয়ে যায়
উত্তর গোয়ার আরও কিছু জনপ্রিয় বিচ
- আরামবোল বিচ
- আশভেম বিচ
- মোরজিম বিচ
- কালাচা বিচ
- বাগা বিচ
- অঞ্জুনা বিচ
- ক্যালাংগুট বিচ
শেষ কথা: কেন ঘুরে আসবেন কেরি বিচ (Keri Beach) থেকে?
কেরি বিচ হয়তো গোয়ার সবচেয়ে পরিচিত নাম নয়, কিন্তু এটাই তার আসল রত্ন। যেখানে গোয়া মানেই ভিড় আর পার্টি বলে সবাই ধরে নেয়, সেখানে কেরি নিজেকে রেখেছে আলাদা — নিঃশব্দ, নির্জন, নির্ভেজাল। আপনি যদি প্রকৃতিকে অনুভব করতে চান, যদি নিঃশব্দে সমুদ্রের ঢেউ শুনতে ভালোবাসেন, তাহলে সকাল সকাল চলে যান কেরি বিচে।
এই ভ্রমণ বিবরণী যদি ভালো লাগে এবং উপকারী মনে হয় তাহলে শেয়ার করতে ভুলবেন না।
কোনো প্রশ্ন থাকলে কমেন্টে লিখুন, আমি উত্তর দিতে পারলে অবশ্যই খুশি হব।
শুভ যাত্রা!