You are currently viewing ভারতের প্রথম হাইড্রোজেন ট্রেন: পরিবেশবান্ধব রেলের নতুন দিগন্ত

ভারতের প্রথম হাইড্রোজেন ট্রেন: পরিবেশবান্ধব রেলের নতুন দিগন্ত

  • Post author:Subhra Das
  • Post last modified:জুলাই 27, 2025
  • Post comments:0 Comments

ভারতের প্রথম হাইড্রোজেন ট্রেন (India’s First Hydrogen-Powered Train) সফলভাবে পরীক্ষিত হয়ে গেলো চেন্নাইয়ে, আর তারই সাথে শুরু হয়ে গেলো দেশের রেল পরিবহন ব্যবস্থাকে বদলে দেওয়ার প্রস্তুতি। সম্প্রতি ইন্টিগ্রাল কোচ ফ্যাক্টরি (ICF), চেন্নাই-এ হাইড্রোজেন চালিত ড্রাইভিং পাওয়ার কার-এর (অর্থাৎ ইঞ্জিনের) সফল পরীক্ষা চালিয়েছে।

এই সাফল্যের ফলে জার্মানি, ফ্রান্স, চীন এবং সুইডেনের মতো দেশগুলোর পাশে ভারতও হাইড্রোজেন ফুয়েল সেল প্রযুক্তির রেল ব্যবস্থায় নিজেদের অবস্থান তৈরি করলো। এখন শুধু অপেক্ষা, যাত্রীপরিবহন শুরুবাদের; একে একে আসছি সব খবরে।

Read in English

চেন্নাই-এ ভারতের প্রথম হাইড্রোজেন ট্রেন ইঞ্জিনের সফল পরীক্ষা

গত ২৫ জুলাই ২০২৫, কেন্দ্রীয় রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব ঘোষণা করেন যে, ভারতের প্রথম হাইড্রোজেন চালিত কোচের সফল পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে। এক্স (পূর্বতন টুইটার)-এ তিনি জানান:

“চেন্নাই ICF-এ প্রথম হাইড্রোজেন চালিত কোচ (ড্রাইভিং পাওয়ার কার) সফলভাবে পরীক্ষা হয়েছে। ভারত ১২০০ HP হাইড্রোজেন ট্রেন তৈরি করছে। এই সাফল্য ভারতকে হাইড্রোজেন ট্রেন প্রযুক্তির নেতৃস্থানীয় দেশগুলোর মধ্যে তুলে ধরবে।”

যে ইউনিটটি পরীক্ষা করা হয়েছে, সেটি একটি ১২০০ হর্সপাওয়ার সম্পন্ন প্রোটোটাইপ, যা পূর্ণাঙ্গভাবে বিকাশিত হলে বিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী হাইড্রোজেন ট্রেন হবে। এই প্রকল্পটি সম্পূর্ণরূপে ভারতীয় প্রযুক্তিবিদদের দ্বারা নির্মিত, যা আত্মনির্ভর ও পরিবেশবান্ধব যাতায়াত ব্যবস্থার ক্ষেত্রে এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ।

ভারতীয় রেল ব্যবস্থায় পরিবেশবান্ধব অগ্রগতি

আপাতত এই হাইড্রোজেন চালিত ট্রেন প্রচলিত ডিজেল ইঞ্জিনের বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করার পরিকল্পনা রয়েছে। হাইড্রোজেন ফুয়েল সেল প্রযুক্তি ব্যবহার করার ফলে নির্গত হয় শুধু জল ও তাপ। এর ফলে দূষণ, বিশেষত কার্বন নির্গমন ও শব্দদূষণ অনেকটাই কমে যাবে, যা জনবহুল ও পরিবেশ সংবেদনশীল এলাকায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

ভারতীয় রেলওয়ের মতে, এটি কেবল একটি এককালীন প্রকল্প নয়। ICF-এর গবেষণা দল দীর্ঘ এক বছর ধরে এই প্রযুক্তি উন্নয়নে কাজ করছে। এই সফল পরীক্ষা ভবিষ্যতে হেরিটেজ এবং পাহাড়ি রুটগুলোতে ট্রায়াল অপারেশনের পথ প্রশস্ত করবে। এর উদাহরণ হতে পারে কালকা-শিমলা ও পুদুচেরির মতো রুট।

পরবর্তী ট্রায়াল রুট: হরিয়ানার জিন্দ-সোনিপত সেকশন

২০২৫ সালের ৩১ মার্চ কিছু গণমাধ্যমে ট্রায়াল ট্রেন চলার কথা বলা হলেও, বাস্তবে ট্রায়াল শুরু হয়নি। তবে পরিকাঠামো প্রস্তুত করা হচ্ছে। হরিয়ানার জিন্দ-সোনিপত রেলপথকে (প্রায় ৮৯ কিমি) বাছাই করা হয়েছে প্রাথমিক ট্রায়াল করিডোর হিসেবে।

India's First Hydrogen train / India's First Hydrogen-powered train Trial Successfull

এই প্রকল্পের জন্য ₹১১১.৮৩ কোটি বরাদ্দ করা হয়েছে। এখানে একটি বিদ্যমান ডিজেল ইলেকট্রিক মাল্টিপল ইউনিট (DEMU)-এ হাইড্রোজেন ফুয়েল সেল প্রযুক্তি স্থাপন করা হবে। ট্রায়াল চলাকালীন ট্রেনটিতে ৮টি যাত্রী কোচ থাকবে, যার আসন ক্ষমতা ২৬০০+ এবং গড় গতি ১১০ কিমি/ঘণ্টা পর্যন্ত হতে পারে।

“Hydrogen for Heritage” প্রকল্প ও দেশব্যাপী পরিকল্পনা

এই উদ্যোগটি ভারতীয় রেলওয়ের “Hydrogen for Heritage” নামে বৃহত্তর পরিকল্পনার অংশ, যার লক্ষ্য হলো হেরিটেজ ও পাহাড়ি রুটে ডিজেল ইঞ্জিনের বদলে পরিবেশবান্ধব হাইড্রোজেন চালিত ট্রেন চালানো।

রেলমন্ত্রী জানিয়েছেন, এই প্রকল্পের আওতায় ৩৫টি হাইড্রোজেন ট্রেন চালানোর পরিকল্পনা রয়েছে। প্রতিটি ট্রেন নির্মাণে প্রায় ₹৮০ কোটি এবং প্রতি রুটে অতিরিক্ত ₹৭০ কোটি প্রয়োজন পরিকাঠামো নির্মাণের জন্য।

এই উদ্যোগ ভারতের হেরিটেজ রেলপথ যেমন শিমলা-কালকা, দার্জিলিং-কার্শিয়াং-শিলিগুড়ি, নীলগিরি (উটি-কুন্নুর) ইত্যাদি রুটে ট্যুরিজম ও পরিবেশ সচেতন ভ্রমণের সঙ্গে পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তির সংমিশ্রণ ঘটাবে।

খরচ ও দক্ষতা: প্রাথমিক খরচের চেয়ে দীর্ঘমেয়াদী লাভ বেশি

হাইড্রোজেন ট্রেন চালানোর প্রাথমিক খরচ ডিজেল বা ইলেকট্রিক ট্রেনের তুলনায় বেশি হতে পারে। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ট্রেন সংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে খরচ কমবে।

আরো গুরুত্বপূর্ণ হলো এর দীর্ঘমেয়াদী পরিবেশগত ও কৌশলগত সুবিধা:

  • শূন্য কার্বন নির্গমন, ভারতীয় নেট-জিরো লক্ষ্যে সহায়ক
  • বিদেশি তেল আমদানির ওপর নির্ভরতা কমানো
  • ডিজেল ইঞ্জিনের তুলনায় কম যন্ত্রাংশ হওয়ায় রক্ষণাবেক্ষণ খরচ কম

বিশ্ব মঞ্চে ভারতের নেতৃত্বের সম্ভাবনা

১২০০ HP সম্পন্ন এই কোচ পরীক্ষার সাফল্যের মাধ্যমে, ভারত হাইড্রোজেন ট্রেন প্রযুক্তির অন্যতম বিশ্বনেতা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছে। জার্মানির আলস্টমের Coradia iLint-এর মতো ট্রেনগুলো সাধারণত ৬০০–৮০০ HP ক্ষমতাসম্পন্ন, তাই স্কেল ও স্পিডে ভারত অনেকটাই এগিয়ে।

পুরোপুরি নতুন ট্রেন না বানিয়ে পুরনো DEMU-কে রেট্রোফিট করে ভারতে খরচ সাশ্রয়ী এবং অনুকরণযোগ্য মডেল তৈরি হচ্ছে, যা উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্যও অনুপ্রেরণা হতে পারে।

হাইড্রোজেন জ্বালানি: পরিবেশবান্ধব বিপ্লবের চালিকাশক্তি

এই প্রযুক্তি ভবিষ্যতে কেবল রেল নয়, আরও বহু ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হতে পারে:

ভারত যখন টেকসই জ্বালানি ও পরিবেশ সচেতন ভবিষ্যতের দিকে এগোচ্ছে, সৌরশক্তি ও বৈদ্যুতিক শক্তির পাশাপাশি হাইড্রোজেন চালিত শক্তিও নিঃসন্দেহে এক বৃহৎ সহযোগী হিসাবে কাজ করতে চলেছে।

কবে চলবে India’s First Hydrogen-powered Train?

যদিও নির্দিষ্ট তারিখ ঘোষণা হয়নি, তথাপি জানা যাচ্ছে যে ২০২৫ সালের আগস্টের মধ্যে এই ট্রেন চালু হতে পারে। ICF কর্তৃপক্ষ ৩১ আগস্টের মধ্যে প্রথম হাইড্রোজেন চালিত ট্রেনটি ভারত সরকারকে হস্তান্তর করবে বলে জানিয়েছে

এদিকে, জিন্দ-সোনিপত রুটে অবকাঠামো নির্মাণ ও ট্রায়াল শুরুর প্রস্তুতি চলছে জোরকদমে।

উপসংহার: India’s First Hydrogen-powered Train

ভারতের প্রথম হাইড্রোজেন ট্রেন কেবল একটি প্রযুক্তিগত সাফল্য নয়, বরং পরিবেশবান্ধব ও ভবিষ্যতমুখী যাতায়াতের প্রতিশ্রুতি। ICF চেন্নাইয়ের সফল কোচ পরীক্ষা এবং আসন্ন ট্রায়াল ট্রেন অপারেশন আগামী দিনে পরিবেশবান্ধব রেলের এক নতুন অধ্যায় শুরু করবে।

সরকারি সমর্থন, দেশীয় প্রযুক্তি এবং সুস্পষ্ট টেকসই লক্ষ্য নিয়ে ভারত এখন ভবিষ্যতের পরিবেশ সচেতন রেল যাত্রার পথপ্রদর্শক হতে চলেছে।

সূত্র: MetroRailToday, India.com, The Hindu, FuelCellsWorks

ভারতের প্রথম হাইড্রোজেন ট্রেন: পরিবেশবান্ধব রেলের নতুন দিগন্ত
High School Teacher | Home |  Articles

মন্তব্য করুন